আইফোনের প্রথম ট্রোজান ভাইরাস, যার নাম ‘গোল্ডপিক্সএক্স’ (GoldphishX), সম্প্রতি সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের কাছে আলোচিত হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ আইফোন সাধারণত নিরাপত্তার দিক দিয়ে শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু এই ভাইরাসটি প্রমাণ করেছে যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমই সাইবার হামলার জন্য পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়। এই ট্রোজান ভাইরাসটি কতটা ক্ষতিকারক এবং কীভাবে এর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ট্রোজান ভাইরাস কি এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
ট্রোজান ভাইরাস, যা সাধারণত ‘ট্রোজান হর্স’ নামে পরিচিত, এমন একটি ম্যালওয়্যার যা বৈধ সফটওয়্যার বা ফাইলের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। যখন ব্যবহারকারী ওই ফাইলটি ডাউনলোড বা ইন্সটল করে, তখন ম্যালওয়্যারটি সক্রিয় হয় এবং ডিভাইসে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি করতে শুরু করে। ট্রোজান ভাইরাস সাধারণত ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ডেটা চুরি করতে বা সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।
‘গোল্ডপিক্সএক্স’ হল প্রথম আইফোনে আক্রমণকারী ট্রোজান ভাইরাস যা আইফোনের iOS অপারেটিং সিস্টেমকে টার্গেট করে। এই ভাইরাসটি নকল বা সন্দেহজনক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ডিভাইসে প্রবেশ করে এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পাসওয়ার্ড, ছবি, ব্যাংকিং তথ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠাতে সক্ষম হয়।
‘গোল্ডপিক্সএক্স’ ভাইরাস কতটা ক্ষতিকারক?
‘গোল্ডপিক্সএক্স’ ভাইরাসটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক, কারণ এটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের উপর সরাসরি আঘাত হানে। এটি ডিভাইসের সব অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেটার উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। মূলত, এই ভাইরাসটি ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এবং ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ডেটা প্রেরণ করতে পারে। এর সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো এটি অ্যাপলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।
ভাইরাসের প্রধান ক্ষতিকারক কার্যক্রম।
- ব্যক্তিগত তথ্য চুরি। ভাইরাসটি ব্যবহারকারীর ফোনে সংরক্ষিত পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করতে পারে। এটি সাইবার অপরাধীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করার সুযোগ দেয়।
- মেসেজিং অ্যাপ নজরদারি। ভাইরাসটি হোয়াটসঅ্যাপ, আইমেসেজ বা অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপ থেকে পাঠানো বা প্রাপ্ত মেসেজগুলিও চুরি করতে সক্ষম।
- ব্যাটারি ও ডেটা খরচ। ভাইরাসটি ব্যাকগ্রাউন্ডে সক্রিয় থাকায় ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে এবং ডেটা খরচও বেড়ে যায়। বিশেষ করে, ভাইরাসটি নেটওয়ার্ক ডেটার মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ করার কারণে ব্যবহারকারীর ডেটা প্ল্যান দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে।
- অ্যাপ্লিকেশন পারফরম্যান্স কমানো। ভাইরাসটি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যা ফোনের পারফরম্যান্সকে কমিয়ে দিতে পারে। এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়।
ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে কিছু কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। নীচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেওয়া হলো, যা এই ট্রোজান ভাইরাসের প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক হবে:
- কেবল নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড। অ্যাপ স্টোরের বাইরে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সন্দেহজনক বা নকল অ্যাপ্লিকেশন থেকে ট্রোজান ভাইরাস আসতে পারে। অ্যাপল স্টোরের বাইরে থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে অনেক সময় ম্যালওয়্যার লুকিয়ে থাকতে পারে।
- অ্যাপ এবং iOS আপডেট রাখা। আইফোন এবং অ্যাপের সর্বশেষ ভার্সন ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপডেটগুলি সাধারণত নিরাপত্তার উন্নতির জন্য হয়। নিয়মিত iOS এবং অ্যাপ আপডেট করলে নতুন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার। অনেক ব্যবহারকারী আইফোনে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করেন না, কারণ তারা আইফোনকে নিরাপদ মনে করেন। কিন্তু বর্তমানে কিছু শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ রয়েছে যা আইফোনে ইনস্টল করা যেতে পারে। এটি সম্ভাব্য ম্যালওয়্যার এবং ট্রোজান ভাইরাসকে শনাক্ত করতে সহায়ক হবে।
- অপরিচিত লিঙ্ক ও মেসেজ থেকে দূরে থাকা। মেসেজ বা ইমেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত অজানা লিঙ্ক বা ফাইল খোলার আগে সতর্ক থাকতে হবে। এটি ট্রোজান ভাইরাস প্রবেশের প্রধান উপায়গুলোর একটি। সন্দেহজনক বা অনির্ভরযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত কোনো ফাইল ডাউনলোড বা ইন্সটল করা উচিত নয়।
- দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ (Two-Factor Authentication) চালু করা। অ্যাপল আইডি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলিতে দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যবহারকারীর তথ্যের সুরক্ষা আরও বাড়ায় এবং অনুপ্রবেশকারীদের পাসওয়ার্ড চুরি করলেও অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা কঠিন করে তোলে।
- ফোন রিসেট করা। যদি ব্যবহারকারী অনুভব করেন যে ডিভাইসটি আক্রান্ত হয়েছে, তবে ফোনটি রিসেট করে সেটিংস পুনরুদ্ধার করতে হবে। এটি ডিভাইস থেকে ট্রোজান ভাইরাস মুছে ফেলতে সহায়ক হতে পারে, তবে ডেটা ব্যাকআপ করা প্রয়োজনীয়। উপসংহার।