পলিগ্রাফ টেস্ট: একটি বিস্তারিত পরিচিতি
পলিগ্রাফ টেস্ট কী?
পলিগ্রাফ টেস্ট, যা সাধারণভাবে lie detector test বা মিথ্যাবাদী নির্ধারক টেস্ট হিসেবে পরিচিত, একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পদ্ধতি যা মানুষের মিথ্যা বলার প্রবণতা শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এই টেস্টটি মূলত শরীরের বিভিন্ন সায়েন্টিফিক পরিমাপের উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যা সাধারণভাবে দুইটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে: হৃদস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ত্বকের গ্যালভানিক প্রতিক্রিয়া।
পলিগ্রাফ টেস্টের কার্যপ্রণালী:
পলিগ্রাফ টেস্টের সময় পরীক্ষকের কাছে একটি পলিগ্রাফ যন্ত্র থাকে যা পরীক্ষিত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে সেন্সর লাগিয়ে মাপ নেয়। সেন্সরগুলি সাধারণত শরীরের ত্বকে স্থাপন করা হয়, যেমন হাতের মাপের চামড়ায় এবং বুকের ওপরে। পরীক্ষার সময়, একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে যেখানে পরীক্ষকেরা নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেন এবং পরীক্ষা চলাকালীন মেট্রিকস সংগ্রহ করা হয়।
যখন একটি ব্যক্তি মিথ্যা বলার চেষ্টা করে, তার শারীরিক প্রতিক্রিয়া সাধারণত কিছু মাত্রায় পরিবর্তিত হয়, যা পলিগ্রাফ যন্ত্র দ্বারা রেকর্ড করা হয়। এটি মূলত দুশ্চিন্তা বা উত্তেজনার কারণে ঘটে, যা মিথ্যা বলার সময় বৃদ্ধি পায়। যন্ত্রের পরিমাপ করা তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে পরীক্ষা শেষ হয় এবং পরীক্ষক ফলাফল নির্ধারণ করে।
পলিগ্রাফ টেস্টের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
পলিগ্রাফ টেস্টের সুবিধার মধ্যে রয়েছে:
1.মিথ্যা শনাক্তকরণ:
এটি মিথ্যা শনাক্তকরণে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যেখানে সন্দেহের মধ্যে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা প্রভাবিত হতে পারে।
2.জরুরি তদন্ত:
অপরাধ তদন্তে বা নিরাপত্তা চেকিংয়ে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।
তবে, এই টেস্টের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে:
1.ভুল ধরা:
সব সময় এটি নিশ্চিতভাবে মিথ্যা শনাক্ত করতে পারে না। কিছু মানুষ দুশ্চিন্তার কারণে মিথ্যা বলা হলেও যন্ত্রের দ্বারা সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায় না।
2.সাংস্কৃতিক এবং মানসিক পার্থক্য:
বিভিন্ন মানুষের মানসিক অবস্থা এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্য বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা পলিগ্রাফ টেস্টের নির্ভুলতা প্রভাবিত করতে পারে।
স্মার্টফোনে পলিগ্রাফ টেস্টের সম্ভাবনা
বর্তমানে, স্মার্টফোনে পলিগ্রাফ টেস্ট করার জন্য কিছু অ্যাপ্লিকেশন বা ডিভাইস পাওয়া যাচ্ছে, তবে এগুলোর নির্ভুলতা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো সাধারণত ফোনের সেন্সর ব্যবহার করে, যেমন ক্যামেরা বা অডিও ফিচার, এবং ত্বকের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে মিথ্যার সনাক্তকরণ করার চেষ্টা করে।
এছাড়াও, কিছু স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীর মুখের অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ করে মিথ্যা শনাক্তকরণের দাবি করে। তবে, এই ধরনের প্রযুক্তি এখনও প্রমাণিত নয় এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ফলাফল সাধারণত পেশাদার পলিগ্রাফ টেস্টের তুলনায় কম নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়।
উপসংহার
পলিগ্রাফ টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি যা মিথ্যা শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, এর নির্ভুলতা ও ফলাফল সবসময় নিশ্চিত নয়। স্মার্টফোনে পলিগ্রাফ টেস্ট করার প্রযুক্তি যদিও বিদ্যমান, তা এখনও সমগ্রভাবে প্রমাণিত বা নির্ভরযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি উন্নতির সাথে সাথে, আশা করা যায় যে এই ধরনের টেস্ট আরো নির্ভরযোগ্য এবং ব্যবহারে সুবিধাজনক হবে।