ভ্রমণ মানেই হলো নতুন জায়গা ঘোরা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা, আর স্মার্টফোন সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে ধরে রাখার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তবে ভ্রমণের সময় স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেহেতু স্মার্টফোনে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ছবি এবং যোগাযোগের মাধ্যম থাকে, তাই এটি হারিয়ে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক ঝামেলা হতে পারে। নিচে ভ্রমণের সময় স্মার্টফোন নিরাপদে রাখার ৫টি কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো:
১.শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও দ্বৈত প্রমাণীকরণ।
(Two-Factor Authentication) ব্যবহার করুন
স্মার্টফোনে নিরাপত্তার প্রথম স্তর হচ্ছে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। শুধুমাত্র সহজ পিন বা প্যাটার্নের পরিবর্তে একটি জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যাতে আলফানিউমেরিক এবং বিশেষ চিহ্ন থাকে। এর পাশাপাশি, দ্বৈত প্রমাণীকরণ ব্যবস্থাও সক্রিয় করুন। এটি আপনার ফোনের নিরাপত্তা দ্বিগুণ করবে, কারণ এমনকি কেউ যদি আপনার পাসওয়ার্ডও জানে, তবুও তারা সহজেই ফোন আনলক করতে পারবে না।
দ্বৈত প্রমাণীকরণ সেটআপ করতে, আপনাকে একটি দ্বিতীয় স্তরের ভেরিফিকেশন পদ্ধতি বেছে নিতে হবে, যেমন ফোনে একটি কোড পাঠানো, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান, বা অন্য কোন নিরাপত্তা অ্যাপ ব্যবহার করা। এটি হলে, পাসওয়ার্ডের পরেও ফোন ব্যবহার করার জন্য আরেকটি নিরাপত্তা স্তর পার করতে হবে, যা আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখবে।
২.VPN ব্যবহার করে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হোন।
ভ্রমণের সময় পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। কিন্তু পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় সাইবার হামলার ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার করুন। VPN ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্টেড হয়ে যাবে, ফলে কেউ আপনার ডেটা চুরি করতে পারবে না।
VPN সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক একটি নিরাপদ টানেলের মাধ্যমে সরানো হয়, যা হ্যাকারদের পক্ষে আপনার তথ্য হাতিয়ে নেওয়া কঠিন করে তোলে। এছাড়া, VPN ব্যবহার করে আপনি আপনার সঠিক অবস্থানও লুকিয়ে রাখতে পারেন, যা আপনার প্রাইভেসি রক্ষা করতে সহায়ক।
৩.ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করুন।
আপনার স্মার্টফোন যদি হারিয়ে যায়, তাহলে সেটিকে খুঁজে বের করার জন্য ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে রাখা খুবই কার্যকর একটি উপায়। গুগল এবং অ্যাপলের নিজস্ব ট্র্যাকিং পরিষেবা রয়েছে, যথাক্রমে “Find My Device” এবং “Find My iPhone”। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোনের লোকেশন জানতে পারবেন, এমনকি প্রয়োজনে ডিভাইসটি লক করে বা সমস্ত ডেটা মুছে ফেলতে পারবেন।
আপনার ফোনের লোকেশন খুঁজে পাওয়া, ডিভাইস লক করা এবং ফোনের মধ্যে থাকা তথ্য মুছে ফেলার সুবিধা ছাড়াও, কিছু ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন আপনার ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে চোরের ছবি তুলে ফেলতে পারে, যা ফোন পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
৪.শক্তিশালী কভার এবং স্ক্রীন প্রোটেক্টর ব্যবহার করুন।
ভ্রমণের সময় ফোন দুর্ঘটনাবশত পড়ে যেতে পারে বা ধাক্কা লাগতে পারে। এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী কভার এবং স্ক্রীন প্রোটেক্টর ব্যবহার করা আপনার ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে। একটি ভালো কভার ফোনের পেছন এবং পাশগুলোকে সুরক্ষিত রাখে, যাতে ফোন পড়ে গেলে ক্ষতি কম হয়। একইভাবে, স্ক্রীন প্রোটেক্টর ফোনের ডিসপ্লেকে দাগ বা ভাঙন থেকে রক্ষা করে।
আপনার ভ্রমণের প্রকৃতি অনুযায়ী সঠিক কভার নির্বাচন করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি অ্যাডভেঞ্চারাস ভ্রমণে যান, তবে এমন একটি কভার নির্বাচন করুন যা শকপ্রুফ এবং পানি প্রতিরোধী। এর ফলে, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির ঝুঁকি কমে যাবে।
৫.ফিজিক্যাল সুরক্ষা নিশ্চিত করুন:
স্মার্টফোনের ফিজিক্যাল সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, ভ্রমণের সময় ফোনটি সবসময় আপনার কাছে রাখার চেষ্টা করুন। ফোনটি এমন একটি ব্যাগে বা পকেটে রাখুন যেখানে সহজে হাত ঢোকানো যায় না। এছাড়া, ভিড়ের মধ্যে চলাফেরা করার সময় ফোনটি হাতে না রেখে নিরাপদ স্থানে রাখুন।
অপরিচিত ব্যক্তির সামনে ফোন বের না করাই ভালো, কারণ এতে চুরির আশঙ্কা থাকে। ফোন ব্যবহার করতে হলে একটি নির্জন জায়গা বেছে নিন। এছাড়া, বিশেষ করে রাত্রিকালীন ভ্রমণে সতর্ক থাকুন। আপনার অবস্থান সম্পর্কে খুব বেশি মানুষকে জানানো থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সমাপ্তি:
ভ্রমণের সময় স্মার্টফোন নিরাপদে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ডিভাইসটি আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি অনেক ব্যক্তিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে। উপরের এই ৫টি উপায় অনুসরণ করে আপনি আপনার স্মার্টফোনকে নিরাপদে রাখতে পারেন এবং নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারেন। স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানে শুধু ডিভাইসটিকে সুরক্ষিত রাখা নয়, বরং আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং প্রাইভেসি রক্ষা করাও। তাই, যেকোনো ভ্রমণের আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।